ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় প্রাণঘাতী মস্তিষ্কখেকো জীবাণুর সংক্রমণে এ বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৭ জন। রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী শিশুটির বয়স মাত্র তিন মাস এবং সবচেয়ে বেশি বয়সী রোগীর বয়স ৫২ বছর। আক্রান্তদের মধ্যে নারী ১৯ জন ও পুরুষ ৩৩ জন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই রোগটি পরিচিত ‘প্রাইমারি অ্যামোয়েবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস’ (প্যাম) নামে। নায়েগ্লেরিয়া ফাউলেরি নামের এককোষী অ্যামিবা এ রোগের জন্য দায়ী। সাধারণত অপরিষ্কার পুকুর, নদী, অল্প ক্লোরিনযুক্ত সুইমিংপুল বা কুয়ার পানিতে এ জীবাণুর বিস্তার ঘটে। স্নান বা সাঁতার কাটার সময় নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করেই এটি মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। এরপর মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করে দ্রুত বংশবিস্তার শুরু করে।
এ জীবাণু একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ায় না এবং সমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে টিকে থাকতে পারে না। সংক্রমণের প্রথম সপ্তাহে জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, বমি, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া দেখা দেয়। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয় খিঁচুনি, হ্যালুসিনেশন ও শারীরিক ভারসাম্য হারানোর মতো জটিল উপসর্গ। চিকিৎসা না পেলে অধিকাংশ রোগী এক সপ্তাহের মধ্যেই মারা যান।
বিশ্বব্যাপী এ রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৯৭ শতাংশ হলেও কেরালায় বর্তমানে তা ২৪ শতাংশে সীমিত রয়েছে। রাজ্যে প্রথমবার ২০২৪ সালে এ জীবাণু শনাক্ত হয়। সে সময় কোজিকোড়, মালাপ্পুরাম ও কান্নুর জেলায় কয়েকজন আক্রান্ত হন।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। নাগরিকদের অপরিষ্কার পুকুর, নদী বা বদ্ধ জলাশয়ে স্নান বা সাঁতার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পানির ক্ষেত্রে ফুটানো বা ফিল্টার করা পানি ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাঁতারের সময় নাকে পানি প্রবেশ রোধে নোজ ক্লিপ ব্যবহার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।