বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব: টিভির নাটক থেকে বাস্তব জীবনের জটিল গল্প

0
38

টেলিভিশনের পর্দায় বছরের পর বছর ধরে ‘বউ-শাশুড়ির ঝগড়া’ নিয়ে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় সিরিয়াল। ‘কিউকি সাস ভি কাভি বাহু থি’-র মতো ধারাবাহিকগুলো শুধু ভারতের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল না, আমাদের ঘরেও সেসব নাটকের চরিত্র হয়ে উঠেছিল ঘরের সদস্যদের মতো। প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলা পরিবারের নারী সদস্যরা যেভাবে একসঙ্গে বসে এসব সিরিয়াল উপভোগ করতেন, তা আজও অনেকের মনে জীবন্ত।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—কেন এই সম্পর্ক এত জটিল? কেন প্রায় প্রতিটি পরিবারে এই দ্বন্দ্বের গল্প ছড়িয়ে আছে? বাস্তব জীবনে এতটা টানাপোড়েন কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে দেখা যায়, এর শিকড় অনেক গভীরে, সমাজব্যবস্থা ও মনস্তত্ত্বে প্রোথিত। আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে একজন নারীর আত্মপরিচয় প্রায়শই নির্ধারিত হয় তার সম্পর্কগুলো দিয়ে—মেয়ে, বউ, মা। নিজের অস্তিত্বকে ভুলে, সন্তানের জন্য নিঃস্বার্থভাবে জীবন কাটিয়ে দেওয়া মায়ের যখন মনে হয় নতুন বউ তার ছেলেকে ‘ছিনিয়ে নিচ্ছে’, তখনই শুরু হয় এক মানসিক প্রতিযোগিতা। অপরদিকে, নতুন পুত্রবধু নিজের মতো করে জীবন সাজাতে চায়, স্বামীর ভালোবাসা ও সময়কে নিজের বলে মনে করতে চায়। এই দুই মনস্তত্ত্বের সংঘর্ষই তৈরি করে দ্বন্দ্ব।

তবে শুধু বউ আর শাশুড়ি নয়, এই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে থাকে একজন পুরুষ—ছেলে, স্বামী, বাবা। তার ভূমিকাই নির্ধারণ করে দেয় সম্পর্কের গতি। সে যদি নিরপেক্ষতা, বোঝাপড়া ও সহানুভূতির জায়গা থেকে উভয় পক্ষকে সম্মান দিতে শেখে, তবে অনেক জটিলতাই সহজে সমাধান করা সম্ভব।

সমাধানের পথটাও খুব কঠিন নয়—সুস্থ পারিবারিক যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্মান ও প্রত্যেকের নিজস্ব জীবনের মূল্যায়ন। শাশুড়ির উচিত নিজের অস্তিত্বকে শুধু ‘মা’ পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নিজের পছন্দ, শখ ও পরিচয় তৈরি করা। বউয়ের জন্য দরকার স্বামীর অকপট সহানুভূতি ও মানসিক সমর্থন। এবং সন্তানদের জন্য প্রয়োজন এমন একটি পরিবেশ যেখানে তারা ভালোবাসা ও সম্মান দিয়ে সম্পর্ক গড়তে শেখে।

‘মা বড় না বউ’—এই প্রশ্নকে সমাজ যখন পরিত্যাগ করবে, তখনই শুরু হবে বাস্তব জীবনে স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের যাত্রা। এখন সময় এসেছে গল্পের মোড় ঘোরানোর, যেখানে দ্বন্দ্ব নয়, থাকবে বোঝাপড়া ও ভালোবাসার গল্প।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here