পাকিস্তানে তালেবানের হামলায় ১২ সেনা নিহত হওয়ার এই ঘটনাটি দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। আইএসপিআর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতের এই হামলাটি ছিল সমন্বিত ও পরিকল্পিত। জঙ্গিরা প্রথমে উত্তর ওয়াজিরিস্তানের একটি সেনা ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং একই সময়ে বান্নু এলাকার সেনা টহলদলের ওপর গুলি চালায়। এতে সেনারা অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়লেও দ্রুত পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রায় কয়েক ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলি চলার পর হামলাকারীরা সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় সরে যায়। সেনাবাহিনীর দাবি, এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত ও আহত হলেও তাদের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
নিহত ১২ সেনার মধ্যে একজন মেজর ও একজন ক্যাপ্টেনও রয়েছেন বলে সামরিক সূত্র জানিয়েছে। এর ফলে দেশজুড়ে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির নিহত সেনাদের পরিবারকে ব্যক্তিগতভাবে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং তাদের আত্মত্যাগকে “জাতির জন্য সর্বোচ্চ গৌরবের প্রতীক” বলে উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও এক বিবৃতিতে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের ভেতরে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না।
হামলার পর পুরো এলাকায় ব্যাপক সেনা অভিযান শুরু হয়েছে। উত্তর ওয়াজিরিস্তানের গ্রামাঞ্চলে ঘন ঘন সেনা টহল বাড়ানো হয়েছে এবং সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই অভিযানের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবার নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান তালেবানের তৎপরতা দমনে বেশ কিছু সামরিক অভিযান চালালেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবানরা সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। পাকিস্তান সরকার বহুবার আফগান তালেবানকে সীমান্ত সুরক্ষার ব্যাপারে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তেমন ফল পাওয়া যায়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের জন্য শুধু নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জই নয়, বরং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবেও বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে যেমন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, তেমনি সেনা অভিযানের সময়ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তালেবানকে কঠোরভাবে দমন করতে না পারলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা দীর্ঘমেয়াদে আরও হুমকির মুখে পড়বে।