চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে ভারত ও চীনের রাষ্ট্রনেতাদের সাক্ষাৎ আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা উঠে এসেছে। শি জিনপিং স্পষ্ট করে বলেছেন, বিশ্বের দুই প্রাচীন সভ্যতা ও জনবহুল রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও চীনের উচিত ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে একে অপরের সাফল্যে অবদান রাখা। একই সুরে মোদীও বলেছেন, দুই দেশের সহযোগিতা সরাসরি ২৮০ কোটি মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত।
এই সময়েই যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতের রপ্তানি খাতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সীমান্ত বিরোধের অতীত ভুলে নয়াদিল্লি ও বেইজিং সম্পর্ক পুনর্গঠনের দিকে এগোচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈশ্বিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে ভারত তার বিকল্প কূটনৈতিক পথ খুঁজছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও এসসিও সম্মেলনে অংশ নেন। তিনি চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে “পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও প্রকৃত ভালোবাসার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা” বলে বর্ণনা করেছেন। পাকিস্তানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত-চীন সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ইসলামাবাদের জন্য নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলবে না। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বেইজিংয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক কৌশলগতভাবে এতটাই শক্তিশালী যে বাইরের কোনো ফ্যাক্টর তা নষ্ট করতে পারবে না।
তবে সাবেক কূটনীতিক জোহর সলিম ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তার মতে, ভারত মূলত কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের সময়ে নয়াদিল্লি চীনের কাছে ঘনিষ্ঠতার বার্তা দিচ্ছে। যদিও বাণিজ্যে ভারত ও চীনের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বাড়ছে, তবুও কৌশলগত দিক থেকে দুই দেশ দীর্ঘমেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই থাকবে।
বিশ্লেষকদের মতে, চীনের জন্য পাকিস্তান এখনো আঞ্চলিক কৌশলের মূল অংশীদার। অন্যদিকে ভারত তার বৈশ্বিক শক্তি হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষায় কখনো পশ্চিমা শিবিরে, কখনো আঞ্চলিক জোটে সমীকরণ বদলাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারত-চীন সম্পর্কের নতুন মোড় পাকিস্তানকে সরাসরি চাপে ফেলছে না, বরং চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা আরও দৃঢ় হওয়ার সুযোগ তৈরি করছে।