বেইজিং, ২১ জুলাই ২০২৫ — তিব্বতের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্ভূত আন্তর্জাতিক উদ্বেগের জবাবে চীন জানিয়েছে, এটি সম্পূর্ণভাবে তাদের “নিজস্ব সার্বভৌম সিদ্ধান্ত” এবং এ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এই প্রকল্প চীনের ভৌগোলিক সীমার ভেতরে, দেশের উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তার প্রয়োজন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মিত হবে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর, যেটি তিব্বতে ইয়ারলুং জাংবো নামে পরিচিত। নির্মাণ শেষে এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনে থ্রি গর্জেস ড্যামকেও ছাড়িয়ে যাবে। চীনের দাবি, এই প্রকল্প পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়নের অংশ, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় তিব্বতকে শিল্পোন্নত অঞ্চলে পরিণত করতে সহায়ক হবে।
তবে এই প্রকল্পকে ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে, বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশে। কারণ ব্রহ্মপুত্র নদ ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়, এবং এর ওপর নির্মিত কোনো বড় বাঁধ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ, কৃষি ও পানি নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানিপ্রবাহ রোধ বা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকায় এই বাঁধ অঞ্চলজুড়ে জলবায়ু ও ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হবে। তবে একইসঙ্গে বেইজিং এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই বাঁধ তাদের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ এবং এতে কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ভারত ইতিমধ্যে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, ব্রহ্মপুত্র নদ ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লাখো মানুষের জীবিকা ও পানির উৎস। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বাংলাদেশ এখনো সরকারিভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন একটি প্রকল্পের পরিবেশগত ও কৌশলগত প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশকেও সতর্ক থাকতে হবে।
ব্রহ্মপুত্রকে কেন্দ্র করে চীন-ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আগেও টানাপোড়েন দেখা গেছে, বিশেষ করে নদীর পানির প্রবাহ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় ও ভবিষ্যৎ অবকাঠামো প্রকল্প নিয়ে। তবে এবার চীন যেভাবে সরাসরি এটিকে “নিজস্ব সিদ্ধান্ত” বলে ঘোষণা করেছে, তাতে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের নির্মাণ শুরু হলে এটি শুধু পরিবেশগত ভারসাম্য নয়, রাজনৈতিক সম্পর্কেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এখন দেখার বিষয়, এই সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো কীভাবে কূটনৈতিক এবং কৌশলগতভাবে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করে।